গতকাল সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা এলাকায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মান রক্ষায় শত মানুষের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি ভারতীয় এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
ইসলাম ও রাসূলের প্রতি ভালোবাসা
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হাজারো মানুষ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মান রক্ষার জন্য তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন বহন করছিলেন, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে ভালবাসা ও শ্রদ্ধার বার্তা তুলে ধরা হয়। সমাবেশস্থলে ‘রাসূলের অপমান মানি না, মানবো না’ স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। বিক্ষোভকারীরা বলেন, মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের গভীরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি যে ভালোবাসা রয়েছে, তা আঘাত করার অধিকার কারও নেই।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, ভারতীয় রাজনীতিকের এই মন্তব্য ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য গুরুতর আঘাত। তারা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, এ ধরনের অশান্তি সৃষ্টিকারী বক্তব্যের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিছিলের ভিডিও ভাইরাল
বিক্ষোভের সময়কার ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বেশ সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশ করছে, তবে মিছিলে কিছু উত্তেজনাকর মুহূর্তও ধরা পড়েছে। সমাবেশে অংশ নেওয়া কয়েকজন মিছিলের সামনের সারিতে অবস্থান করছিলেন, যারা অত্যন্ত উত্সাহীভাবে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
এই ভিডিওগুলোকে কেন্দ্র করে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে মিছিলের অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে, বিক্ষোভের প্রথম সারিতে দেখা গিয়েছে কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিত্বকে, যারা বাংলাদেশের ২০২৪ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিরোধী ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিতর্কিত ব্যক্তিরা সামনের সারিতে!
বিক্ষোভে যারা সবচেয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মান রক্ষার দাবিতে সরব হলেও, এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়া এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক অপতৎপরতায় যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় জনগণের একাংশের দাবি, মিছিলের এসব নেতারা হয়তো জনগণের আবেগকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই আন্দোলনের অংশ হয়েছেন। এসব বিতর্কিত ব্যক্তিরা ২০২৪ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিরোধী দলগুলোর পক্ষে ছিলেন এবং যুদ্ধবিরোধী কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
জনমনে প্রশ্ন: প্রতিবাদ না রাজনীতি?
বিক্ষোভে বিতর্কিত ব্যক্তিদের উপস্থিতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ইসলামের প্রতি ভালোবাসার আড়ালে কিছু ব্যক্তি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এই ধরনের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছেন। তাদের অংশগ্রহণ কতটা সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতার অভিযোগ রয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত। বিক্ষোভে তাদের এমনভাবে সক্রিয় দেখা যাওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, এরা বিক্ষোভের প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন।
সাধারণ জনগণের ভূমিকা
তবে মিছিলে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের মানুষ মিছিলে যোগ দেন। ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা বলেন, এই ধরনের অসম্মানজনক মন্তব্য শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে আহত করেছে। তারা এ ধরনের অপমানের কঠোর প্রতিবাদ জানান।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, মুসলমানদের ঐক্যই এই ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানদের একত্রিত হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিবাদ করা উচিত, যেন আর কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সাহস না করে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা বিক্ষোভ সম্পর্কে অবগত এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। একইসঙ্গে তারা দেশের জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, দেশের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সরকার পূর্ণ সম্মান দেখায় এবং যে কোনো ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চান্দাইকোনা এলাকায় অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ মিছিল দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জনগণের অনুভূতি ও ভালোবাসার প্রতিফলন যেমন এই মিছিলের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি বিতর্কিত ব্যক্তিদের সক্রিয় উপস্থিতি নানা প্রশ্নও তুলেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সম্মান রক্ষার দাবিতে মিছিলের প্রকৃত উদ্দেশ্য কখনও রাজনীতি বা ব্যক্তিগত স্বার্থের আড়ালে চাপা পড়ে না, এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা পরিষ্কার হওয়া জরুরি। সত্যিকারের প্রতিবাদ কি ধর্মের প্রতি ভালোবাসা থেকেই উঠে আসছে, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা—এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়া একান্ত প্রয়োজন।