প্রতিদিন ধূমকেতু

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে হিজবুল্লাহ ঘাঁটি ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সম্প্রতি ইসরাইল হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে সীমিত আকারের স্থল অভিযান শুরু করেছে, যেখানে ওই এলাকা থেকে ইসরাইলি নাগরিকদের উপর বড় আক্রমণ পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)।

ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, “হিজবুল্লাহ এই গ্রামগুলোকে ইসরাইলি বাড়িতে হামলা চালানোর জন্য স্টেজিং গ্রাউন্ড হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।” হিজবুল্লাহর পরিকল্পনার মধ্যে ইসরাইলি জনপদে প্রবেশ করে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটানো অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা অক্টোবর ২০২৩-এর হামলার পুনরাবৃত্তির মতো ছিল।

২০ বছরে ফিলিস্তিনে হতাহতের পরিসংখ্যান এবং সাম্প্রতিক ২ বছর

গত ২০ বছরে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি অভিযান এবং হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। তবে বিশেষ করে গত দুই বছরে, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালের গাজা যুদ্ধের সময় সংঘর্ষ সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। গাজা ও পশ্চিম তীরে সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রায় ৪১,৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯৬,০০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। ইসরাইলের এই অভিযানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ জনগণ, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনের লঙ্ঘন এবং ব্যবহৃত অস্ত্র

গত দুই বছরে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, তার মধ্যে কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং যুদ্ধ আইনের লঙ্ঘন হিসাবে সমালোচিত হয়েছে। বিশেষত, নিন্মোক্ত অস্ত্রগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে:

  1. ফসফরাস বোমা: ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী জনবহুল এলাকায় ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ফসফরাস বোমার ব্যবহার শত্রুপক্ষকে দমাতে এবং ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এটি জনবহুল এলাকায় ব্যবহার করা হলে প্রচুর বেসামরিক ক্ষতি করতে পারে, কারণ এটি গুরুতর অগ্নিদগ্ধ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
  2. বিস্ফোরক অস্ত্র: ইসরাইলের অভিযানে জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরক অস্ত্রের ব্যবহার ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। বিস্ফোরক অস্ত্রগুলি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত করতে ব্যর্থ হলে বিশাল সংখ্যক বেসামরিক হতাহত হতে পারে।
  3. আবদ্ধ এলাকায় বোমাবর্ষণ: গাজার মতো ছোট এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান হামলা এবং স্থল অভিযান চালানো আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইন লঙ্ঘনের আরেকটি উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিমান হামলাগুলো অসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে, যা “আনুপাতিকতা” নীতির লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়, যেখানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুর জন্য অত্যধিক বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে না।

ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা

উত্তর ইসরাইলে হিজবুল্লাহ থেকে আসা রকেট হামলার ফলে বিভিন্ন শহরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং বহু ইসরাইলি নাগরিক সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এদিকে, ইসরাইলি নিরাপত্তা মন্ত্রী ইটামার বেন গিভির হিজবুল্লাহকে “নির্মূল” করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে স্থানীয় অধিবাসীদের বাড়ি ফিরে আসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

এই সংঘাত আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিশেষ করে হাউথি বিদ্রোহীদের মতো অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর ইসরাইলি অবস্থানগুলিতে ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করার পরে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *